‘আমি ১৫ বছর পর সেকেন্ডহ্যান্ড ঝরঝরে গাড়ি কিনেছি, তুমি নতুন গাড়ি কিনলে কোন সাহসে?’ অভিনেতাকে জোরে বকা দিলেন টলিউড কাঁপানো ‘ভিলেন’ বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়

টলিপাড়ার শেষ কিংবদন্তি ভিলেন হলেন অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (Biplab Chatterjee)। অপর্ণা, দেবশ্রী, শতাব্দীদের প্রায় সকল ছবিতে দেখা মিলতো এই অভিনেতার। টিভির পর্দায় তিনি আদ্যন্ত ভিলেন হলেও বাস্তবে অসম্ভব একজন ভাল মানুষ তিনি। তবে তার স্পষ্টবক্তা, সত্যিটা মুখের ওপর বলে ফেলার স্বভাব হয়তো অনেকেরই পছন্দ নয়। তাই তিনি অনেকের কঠিন কিন্তু মনটা নরম। তাঁর সেই ‘শকুনির পাশা’ অনবদ্য। আজ সেই মানুষটির জন্মদিন, এদিনে এক সাক্ষাৎকারে মন খুলে কথা বললেন বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (Biplab Chatterjee)। পাশাপাশি বর্তমানের ইন্ডাস্ট্রির ভুলগুলিও চোখে আঙ্গুল দিয়ে তুলে ধরলেন।

বর্তমানে তিনি বই পড়ে আর কিছু লেখালেখি করেই কাটাচ্ছেন সময়। একটি নাটকের চিত্রনাট্য লিখছেন সেটা মঞ্চস্থ করবারও ইচ্ছে আছে কিন্তু পয়সার অভাবে তা হচ্ছে না। প্রযোজকের অভাবে নাটক ছবি কিছুই পরিচালনা করতে পারছেন না বলে জানান অভিনেতা। রাজনীতির ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলে তিনি জানান, তিনি প্রকাশ্যে বামপন্থী। তাঁর মতে, বামফ্রন্টের মনে হয় ছিটেফোঁটা কিঞ্চিৎ আদর্শ বেঁচে আছে। কিন্তু বাকি দলের আদর্শ বলে কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘গর্ব সহকারে এটাও বলে যাচ্ছি, আমাদের দেশকে যদি বাঁচাতে পারে এই বামফ্রন্টই বাঁচাতে পারবে অদূর ভবিষ্যতে’। তবে এই বামপন্থী মনোভাবের জন্যই অভিনেতাকে আজকালকার সিনেমায় ডাকতে অবহেলা করা হচ্ছে।

তবে বিপ্লব দা বলেন, “অবহেলা তো আছেই। সেটা ছেড়ে দিন। ডাকছে না ডিরেক্টরের পছন্দ নয় আমাকে, তাই ডাকছেনা। না ডাকলে আমি তো রোল চাইতে যাব না। আমি তো বলছি আমি কাজ করতে রাজি। ভাল করবার মতো রোল পেলেই করব”।পাশাপাশি সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়দের প্রসঙ্গে বলেন, “ও বাবাহ! বিশাল মাপের বিরাট ডিরেক্টর ওঁরা। তাঁরা আমার কাছে কেন আসতে যাবেন? ও বলে লাভ নেই। আপনার কাছে আমি বড় মাপের ভার্সেটাইল অভিনেতা, কিন্তু ওঁদের কাছে নই। তাই আমায় পছন্দ করেন না, ডাকেন না। ওঁরা এত বড় মাপের বড় নাম কেন আমার কাছে আসতে যাবে বলুন তো”!

আরও পড়ুনঃ ধারাবাহিকে নারীদের অপমান নিয়ে লীনা গাঙ্গুলীকে কটু কথা, ‘গুলি করে মারব’ হুমকি বিপ্লব চ্যাটার্জীর!

বর্তমান ধারাবাহিকের দিকে আঙ্গুল তোলেন অভিনেতা। তাঁর কথায়, “দু একজন ভালো অভিনয় করেন। বেশিরভাগই তো সাউথসিটি মল থেকে বেরচ্ছে, তাদের ধরে এনে সিরিয়ালে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তারপরই জিম করা ছবি, গাড়ি বাড়ি আপডেট। এদের ভবিষ্যৎ কিন্তু অন্ধকার। সিরিয়ালের মান হয়ে গিয়েছে অতি নিম্ন। লোকের কাছে বিকল্প নেই তাই এরাই চলছে বাজারে। সিরিয়াল যেটুকু চোখে পড়ে দেখি এদের উচ্চারণ ঠিক নেই, স-স-স করে কথা বলে। কাকে শেখাব আমি? শেখবার আগেই এরা সব পেয়ে গেছে আমাকেই শিখিয়ে দেবে এবং সিনিয়র আর্টিস্টদের সম্মান করা আজকাল ইন্ডাস্ট্রি থেকে উঠে গেছে”।বর্তমানের ধারাবাহিকের ‘গল্পের গরু গাছে ওঠে’। কোনও ভালো গল্প নেই, খালি বাড়ানোর চিত্রনাট্য রয়েছে। যিনি লিখছেন পয়সা পেয়ে যাচ্ছেন, তাই ব্যবসা চলছে। তবে ‘চকচক করলেই সোনা নয়’।

আরও পড়ুনঃ ‘বাংলা চ্যানেলের জন্যই উচ্ছন্নে যাচ্ছে গোটা সমাজ!’, মিঠাই, ধূলোকণার উপর ক্ষেপে লাল অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়

ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “এর আগে যখন লকডাউন চলছিল একজন নবীন অভিনেতার সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। সে বলল যে আমি নতুন গাড়ি কিনেছি ইএমআই দিতে পারছি না। কী করব বুঝতে পারছি না। আমি বললাম তোমাকে নতুন গাড়িটা কিনতে কে বলেছিল! আমি নিজে দীর্ঘদিন সিরিয়াল নয়, বহু ছবিতে কাজ করে ১৫ বছর পর একটা সেকেন্ডহ্যান্ড ঝরঝরে গাড়ি কিনতে পেরেছি। তুমি নতুন গাড়িটা কিনতে গেলে কোন সাহসে? আমায় বোঝাও তুমি। এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনিশ্চয়তার জায়গা একটা। আজ আছে কাল নেই। তখন সে চুপ করে গেছে”। মোটকথা অভিনেতার কথায়, তারকাদের স্টেটাস সিম্বল শো অফ ষোলআনা চাই। স্টেটাসটাই আজকাল সব। বড় গাড়ি, সাউথসিটির বড় হাইরাইজ ফ্ল্যাট- এসবেই শেষ। বোঝাই যাচ্ছে, বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির যে শোচনীয় অবস্থা তাই বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি।

Back to top button