আমি নিজেই রাজনীতির শিকার! এখন সবাই রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে টাকা রোজগারে ব্যাস্ত! অকপট স্বর্নযুগের শিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায়

ভারতীয় গানের জগতে একটি জনপ্রিয় মুখ আরতি মুখোপাধ্যায় (Arati Mukhopadhyay)। তার গান দিয়েই তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন সংগীত জগৎ। সেই সময় থেকে এখনও একইভাবে জনপ্রিয় তার গান। প্রায় ৬০টির ওপরে হিন্দি গান গেয়ে তিনি জিতে নিয়েছেন দর্শকদের মন। ১৯৮৩ সালের মাসুম এবং ১৯৭৪ সালের ফুলেশ্বরী তাকে এনে দিয়েছে জনপ্রিয়তা। ১৯৮৪ সালে তার গান দো নেয়না অর এক কাহিনীর জন্য প্লে ব্যাক গায়িকা হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন ফ্লিম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। ১৯৫৮ সালে মিনা কুমারীর সিনেমা সাহারাতে নেপথ্য গায়িকা হিসেবে শুরু করেছিলেন তার দীর্ঘ সঙ্গীত জীবন যদিও এই গানটি তাকে এনে দেয়নি সফলতা। ১৯৬৬ সালে গল্প হলেও সত্যি সিনেমায় নেপথ্য গায়িকা হিসেবে তিনি জিতেছিলেন বিএফজি পুরস্কার।

এছাড়াও বাংলার মহানায়িকা সুচিত্রা সেন, মাধবী মুখোপাধ্যায়, তনুজা, অপর্ণা সেন, শর্মিলা ঠাকুর, দেবশ্রী রায় প্রমুখ অভিনেত্রীর সিনেমায় নেপথ্য কণ্ঠ হিসেবে তার গান সিনেমায় এনে দিয়েছে অন্যমাত্রা। বাংলায় প্রায় ১৫০০০ টি অনুবাদিত গান এছাড়াও হিন্দি সহ একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিকরা। সেখানেই তিনি তার সঙ্গীত জীবন নিয়ে বলেছেন অনেক অজ্ঞাত কথা।

Arati Mukhopadhyay

সাংবাদিকরা গায়িকা আরতি মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করেছিল তার সঙ্গীত জীবনের শুরুটা কিভাবে হয়েছিল? তিনি জানিয়েছিলেন “কণ্ঠ ঈশ্বর প্রদত্ত। তবে কিভাবে গাইতে হবে, কোন পিচে গাইতে হবে সবটাই অভ্যাস আর তোমার বিচক্ষণতার ওপর নির্ভরশীল। আমার গানের যাত্রা শুরু হয়ে ছিল অনেক আগে। ১৪ বছর বয়সে আমি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রথম গিয়েছিলাম। তখন থেকে আবার এখন পর্যন্ত যাত্রা। সিনেমায় গান করা মানে শুধু গান করা নয়, অভিনয়ও। কোথায় সেল বাড়াতে হবে কোথায় কমাতে হবে সবটাই করতে করতে শিখেছি, পরিশ্রম তো লাগেই।”

আমি নিজেই স্বর্ণযুগের মানুষ, বর্তমানে সেই রবীন্দ্রসঙ্গীত গান রিমেক করে কাজ চলছে, স্বর্ণযুগের সেই সময় কি আবার ফিরবে? তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন “রবীন্দ্র সংগীত শুনেছি আর ভবিষ্যতেও শুনবো কারণে নাহলে আমরা কিছু শিখতে পারবো না, গানের ভালো জ্ঞান না থাকলে রবীন্দ্রনাথ কথায় কেন কি গেয়েছেন সেটা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তার গান এইভাবে পরিবর্তন করা অসম্ভব।” তিনি জানিয়েছিলেন “জীবনে শক্ত ভাবতেই শক্ত। আমার প্রায় সব গানই কঠিন কিন্তু সেটা সহজ করতে হবে।”

তিনি এও জানিয়েছিলেন “আমি আগে যা গেয়েছিলাম এখন গাইকে অন্যভাবে গাইতাম। এখন কোথাও গাইতে গেলে আমি আলাদাভাবে চেষ্টা করি। যা হওয়ার গিয়ে গেছে, এখন আমি মুক্তি এখন যেভাবে গাইছি সেটা সকলের পছন্দ হলেই আমি সাকসেসফুল।” সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আপনার কি মনে হয় রিয়ালিটি শো থেকে কি ভবিষ্যতের সঙ্গীত শিল্পী উঠে আসবে? তিনি জানিয়েছিলেন “হ্যাঁ হয়তো আসবে, তারাও ভালো গায় তবে আমি বুঝি না তাদের দিয়ে নতুন গান গাওয়ানো হচ্ছে না কেন, সেই বহু পরিচিত গান, যারা গেছেন তারা ব্যাক্ত করে গেছেন এরা গাইলেও সেই একইভাবে গাইবে তবে এদের যদি নতুন গান দেওয়া হয় তাহলে বোঝা যাবে এদের প্রতিভা কোথায়, এরা সেই গানগুলো কিভাবে গাইছে। আমাদের সময় আমাদের নতুন গান দেওয়া হত, কারুর ধার করা গান গাইতে হয়নি। তবে এখন সকলেই তাড়াতাড়ি বিখ্যাত হয়ে টাকা রোজগার করতে চায়। বাবা মাদেরও খানিকটা দোষ আছে।”

তিনি এও জানিয়েছিলেন “আমার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্রের গলা তাদের কি সুন্দর গলা ছিল, মান্না দের শিক্ষা তার গানের জ্ঞান, আমি তো সন্ধ্যা মুখোাধ্যায়ের ছাড়া ছোটবেলায় কিছু চিনতাম না। যেটা এখন দেখা যায়না। প্রত্যেকের একটা আলাদা স্টাইল দরজার।” সঙ্গীত জগৎ থেকে হটাৎ চলে যাওয়া, রাজনীতির শিকার হতে হয়েছিল? তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন “রাজনীতি এখন সব জায়গায়। ভালো গান গাইলেই টিকে থাকা যায় এমনটা নয়, আমরাও শিকার হয়েছি।”

আরও পড়ুনঃ সুচিত্রা সেনের দেমাক অহংকার ছিল চূড়ান্ত! উত্তম কুমারের দুই অভিনেত্রীর মধ্যে ছিলনা মনের মিল! অকপট বর্ষীয়ান অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী

আপনার অনেক গানই গেয়েছেন আশা ভোঁসলে এমনটাই শোনা গেছিল কথাটা কতটা সত্যি? “আমিও শুনেছি, দেখিনি তাই কিছু বলব না।” এছাড়াও তিনি তার পছন্দের গান “তখন তোমার একুশ বছর…” গেয়েছিলেন সাংবাদিকদের অনুরোধে। তবে সব কিছুর পরও এটা বলাই বাহুল্য আরতি মুখোপাধ্যায় বাংলা এবং বাঙালির নাম ছড়িয়েছেন দেশ বিদেশে। তাকে কুর্নিশ জানাই আমরা।

Back to top button