ষড়যন্ত্র করে একমুহুর্তে ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, আজও বাতিল হওয়ার দুঃখ তাড়া করে বেড়ায় দুলাল লাহিড়ীকে!

এখন তিনি সকলের প্রিয় জ্যাঠাই। নিজের অভিনয় প্রতিভা দিয়ে প্রতিদিন দর্শকদের হাসিয়ে চলেছেন। তবে তাঁর স্বপ্নের চরিত্র ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘ভুবন সোম’, কিংবা ‘জলসাঘর’-এরর বিশ্বম্ভর রায়ের মতো কোনও চরিত্র। কথা হচ্ছে দুলাল লাহিড়ীর (Dulal Lahiri)।

এত বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে কাজ করেছেন বহু চরিত্রে। কখনও ভিলেন আবার কখনও মজার মানুষ হয়ে উঠেছেন সকলের। কিন্তু মনে একটা ভয় আজও রয়ে গিয়েছে। তা হল বাতিলের। পাবনায় সুচিত্রা সেনের পাশের বাড়িতে জন্ম নিয়েছিল এক অভিনয় মনস্ক মানুষ। হঠাৎই সেই বাড়িতে আসে মনোজ মিত্রের ফোন। তারপরই একটা বদল ঘটেছিল সেই অভিনয় মনস্ক ব্যক্তির জীবনে।

দুলাল লাহিড়ী জানান সেদিন ফোনে মনোজ মিত্র বলেছিলেন, “তোমাকে তপনদা এন-টি টু স্টুডিওতে নিয়ে যেতে বলেছেন।” নিজের ভয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে বলতে অভিনেতা ফিরে যান নিজের পুরনো দিনে। তাঁর কথায়, তপন সিংহ সেই সময় মনোজ মিত্রের ‘সুন্দরম’ নাট্যদলে নাটক দেখতে যান। ‘সাজানো বাগান’। তারপরে মনোজ মিত্রকে বাঞ্ছারামের বাগানে কাস্ট করেন। জমিদার হচ্ছেন উত্তম কুমার। শাসনে বাগান তৈরি হয়েছে। শুটিং হবে সেখানেই। এরই মধ্যে উত্তম কুমার জানিয়ে বসলেন, শুটিং দুমাস পিছোতে হবে বম্বেতে কাজ পড়ে গেছে।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অভিনেতা বলেন, সেই সময় তপন সিংহের পক্ষে সম্ভব নয় কাজ পেছানো। ঠিক তখনই মনোজ মিত্রকে দিয়ে ডাকা হয় দুলাল লাহিড়ীকে। উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলে বসেন, “আমি ঠিক করলাম, জমিদার হোক দুলাল”। যা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন অভিনেতা। স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে মনোজবাবুর পাশের ঘরে পুরোটা একবার দেখে নিলেন। পরদিনও একই ভাবে গিয়েছিলেন সেটে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন ভীষ্ম গুহঠাকুরতা, দেবিকা মিত্র। খানিকবাদে উপস্থিত হলেন প্রযোজক ধীরেশ চক্রবর্তী।

আরও পড়ুনঃ তাঁকে ভালবাসতেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায় অথচ বাংলা ইন্ডাস্ট্রি ভুলেই গেল মনু মুখোপাধ্যায়কে! একবুক দুঃখ নিয়েই বিদায় নিলেন তিনি

এরপরই অভিনেতা জানান, জানা ছিল না দুঃসংবাদ আসতে চলেছে। বলেন, ধীরেশবাবু তপনবাবুকে ডেকে হঠাৎই তিনি বলেন কথা আছে। কথা হওয়ার পর গম্ভীর মুখ আর শোকাহত লাগছিল দুজনকে। তারপরই অভিনেতাকে দিলেন একটি দুঃসংবাদ। বলেন, “সরি দুলাল, তোমায় নিতে পারছিনা। এমনিতেই সিনেমায় মনোজ নতুন। তার ওপর আর একজন নতুন নেওয়াটা ঝুঁকির। জমিদার হবে দীপঙ্কর দে। ভেরি ভেরি সরি।”

তখন ভেতরটা কি হচ্ছিল তা একমাত্র অভিনেতাই বলতে পারেন। কিন্তু তাও কিছু না বলে, কোনও রাগ না দেখিয়ে বেরিয়ে এসেছেন সেট থেকে। এই ঘটনাটা আজও তাঁর মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। তাই আজও ভয় পান বাতিল হওয়ার। বলা যায়না আজ অভিনয় ক্যারিয়ারের এত বছর পরেও কেউ এভাবেই তাঁকে বাতিল করে দিল। ক্যারিয়ারের সেই সময়ে ওই ঘটনা দাগ কেটে গিয়েছে অভিনেতার মানে। যা সত্যিই ভোলার নয়।

Back to top button