তাঁকে ভালবাসতেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায় অথচ বাংলা ইন্ডাস্ট্রি ভুলেই গেল মনু মুখোপাধ্যায়কে! একবুক দুঃখ নিয়েই বিদায় নিলেন তিনি

চলে গিয়েছেন অনেক দূরে, রেখে গিয়েছেন অনেক স্মৃতি। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে কাজ করেছেন প্রচুর। তবে তাঁর সবকটি চরিত্রের মধ্যে একটি চরিত্র আজও সকলের কাছে খুব প্রিয়। কথা হচ্ছে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর ‘মছলিবাবা’ ওরফে মনু মুখোপাধ্যায়ের (Monu Mukherjee)।

তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর এই চরিত্রের জন্য। চরিত্রের কথা শুনে কাঁপা গলায় নিজের স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। ‘পাতালঘর’-এর মত একটা অত্যন্ত ভালো ছবি করেছেন। কিন্তু মছলিবাবার চরিত্র আজীবন মনে রেখে দেবে আর দিয়েছে দর্শকবৃন্দ। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে খলনায়ক মনু বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দাড়িওয়ালা মুখের সঙ্গে মনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের মিল খুঁজে পেয়ে এই চরিত্রের জন্য তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়।

মছলিবাবার এই চরিত্রের জন্য তিনি কিভাবে ডাক পেয়েছিলেন, তা নিয়ে একবার মনুবাবু বলেছিলেন, “তখন মিনার্ভায় থিয়েটার করি। ল্যান্ডফোনে ফোন আসে। সহযোগী পরিচালক জানাল, সত্যজিৎ রায় দেখা করতে চান। সেই মতো বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে গেলাম পরদিন। উনি আমাকে ভালো করে দেখলেন। তারপর নির্দেশ দিলেন মেকআপ করতে। দেড় ঘন্টা ধরে মেকআপ আর্টিস্ট মেকআপ করল। ঠিক তখন রুমে এসে পৌঁছেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁরও একপ্রস্থ মেকআপ হল। সত্যজিৎ রায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করেন, ‘মনুকে ঠিক লাগছে?’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জবাব একেবারে ঠিক লাগছে। তারপরেই মছলিবাবার কাস্টিং।”

Joy Baba Felunath

এক অদ্ভুত ভাবে এই চরিত্রের জন্য তাঁকে বেছে নেন সত্যজিৎ রায়। অভিনয়ের দিক থেকেও অসাধারণ ছিলেন তিনি। বেনারসে হয়েছে শুটিং। সেই সময়কার কথা বলতে গিয়ে মনু বাবু জানিয়েছিলেন, “বেনারসে শুটিং। ডিসেম্বর মাস। হোটেলে থাকতাম। পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করে খেতাম। শুটিং নিয়ে এত চিন্তা করতাম না আমি। কিন্তু মানিকদা সবকিছু নিয়ে ভাবতেন। আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘মনু, শট কিন্তু একেবারে ওকে চাই। না হলে তোমাকে গঙ্গায় আবার ডুবতে হবে।’ এক টেকে ওকে হল শট। সঙ্গে সঙ্গে নিজের গায়ের চাদর খুলে আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন।”

বহু পরিচালক এর সঙ্গে কাজ করা সত্বেও, সত্যজিৎ রায়ের তরফ থেকে যে আন্তরিকতা তিনি পেয়েছিলেন, তা তার কাছে ভোলার ছিলনা। গত বছরই বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এরকম এক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে সকলে। বাংলা ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে বলেগেছিলেন, ‘আঁধার ঘনিয়ে আসার আঁচ পাচ্ছি। এখনই শক্ত হাতে হাল না ধরলে, সামনের পথ মসৃণ নয়।’ তাঁর প্রত্যেকটি চরিত্র, তাঁর অভিনয় ছিল অসাধারণ-অদ্বিতীয়।

Back to top button