Pannalal: তার গান ছাড়া অচল কালীপুজো অথচ আমার সাধ না মিটিলো,তোমার কর্ম তুমি করো মা’র মতো কালজয়ী শ্যামাসঙ্গীত গেয়েও কোনোদিন সম্মানই পেলেন না পান্নালাল! চলে গেছিলেন এক বুক কষ্ট নিয়ে

শ্যামাসঙ্গীতের মুকুটহীন রাজাই রয়ে গিয়েছেন তিনি। তবু নিজের জীবন বা গান নিয়ে কোনদিন সন্তুষ্ট হতে পারেননি পান্নালাল। মায়ের প্রতি আকুতি ক্রমশ বাড়ছিল তাঁর।

এতো জাদু কীভাবে তৈরি হতো তাঁর গলায়? এতো কান্না, এত আকুলতা? দুই দশকের সঙ্গীত জীবনের প্রথমে রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, দাশরথি রায় বা রজনীকান্ত সেনের মতো চিরস্মরণীয়দের আখর ছিল তাঁর কাছে। দ্বিতীয় ভাগে ছিলেন দিলীপ কুমার রায়ের মতো কৃতি সঙ্গীতকাররা। জীবদ্দশায় ৩৬ টি আধুনিক গান সমেত ১৮ টি রেকর্ড, তিনটি বাংলা সিনেমার গান এবং ৪০ টি শ্যামাসঙ্গীত রেকর্ড করেছিলেন পান্নালাল। তাঁর নিজের লেখা এবং সুর করা কয়েকটি গানও রয়েছে।

Daughter of Pannalal Bhattacharya requests mamata banerjee for more respect - Anandabazar

কিন্তু অনালোচিত রয়ে গেছে তাঁর গাওয়া বাংলা আধুনিক গান। ১৯৫৬ সালে মমতা চট্টোপাধ্যায়ের কথা আর প্রবীর মজুমদারের সুরে তীরে তীরে গুঞ্জন বা ও আমার কাজল পাখি এখনও চমকে দিতে পারে শ্রোতাদের। সুরের ভুবনে সফর শুরু সেই কিশোরকালে। তারুণ্যের জগতে প্রবেশের আগেই খ্যাতির শিখরে পান্নালাল। কিন্তু সময়ের দাবি আর থাকবন্দি ইমেজ হয়তো আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল তাঁকে।

বাংলার মাঝি-মাল্লার ধুন পান্নালালের গান। আমি বাঙালি শুনছেন, ভালোবাসছেন, রেকর্ড কোম্পানি গুনছে লাভের টাকা। এমন এক আপাত মসৃণ জগতেই মেঘের আনাগোনা। পান্নালালের মন সমুদ্র উথাল পাথাল। খ্যাতিমান এই শিল্পী ভেতরে ভেতরে এক বিপন্ন নাবিক। জীবদ্দশায় বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল রেকর্ড কিন্তু তখনকার দিনে আধুনিক গানের এত প্রভাব এবং সিনেমার গানের এত প্রকোপ সেখানে শ্যামাসঙ্গীত অতটা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। পৃথিবীতে কিছু শিল্পী জন্মায় যারা আত্মিক শিল্পী কিন্তু তারা হয়তো নিজেদের সময়ে সেই জায়গা বা সম্মান পায় না।

পান্নালালের জীবনে স্রোত বিপরীত স্রোতের শুধু আসা-যাওয়া। শ্যামাসঙ্গীত জনপ্রিয় হলেও অনুষ্ঠানের জন্য ডাক পেতেন না তিনি। নিজেকে বদলাতে চাইছিলেন পান্নালাল। কিন্তু ব্যর্থ হলেন। কালীঘাটে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পর মাঝে মাঝেই চলে যেতেন কেওড়াতলা। সেখানে তাঁর বৈরাগ্য তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকতো। বুঝতে পেরেছিলেন একজন কোটিপতি সেও আগুনে পুড়ছে আর একজন ভিখারী সেও আগুনে পুড়ছে। এটাই তো জীবনের শেষ।

Back to top button