Surajit Sen EXCLUSIVE: “২৪ বছর পরেও আমাকে এখানে বলতে হয় দাদা একটু দেখবেন, একটা কাজ দেখবেন”! খেলাঘর সিরিয়ালের ভিলেন “ববিন” আজও টিকে থাকতে স্ট্রাগল করছেন! বললেন পুরোটাই “পলিটিক্যাল গেম”

বসেছিলেন অল ইন্ডিয়া ডাক্তারি পরীক্ষায়। হয়ে গেলেন অভিনেতা। ১৮০° পাল্টে গেল পথ। তিনি টেলিভিশনের জনপ্রিয় ভিলেন সুরজিৎ সেন। আমাদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট টলিউড অভিনেতা সুরজিৎ সেন।

Surajit Sen Official (@SurajitOfficial) / Twitter
প্রশ্ন: অল ইন্ডিয়া ডাক্তারি পরীক্ষা থেকে সোজা অভিনেতা। কীভাবে?

সুরজিৎ: আমি বায়ো সাইন্সে খুব ভাল ছিলাম স্কুল এবং কলেজ লাইফে। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। সেই যুগের মানুষ তাই তখনকার দিনে দুটো কথাই শুনতাম হয় ডাক্তার হও নইলে ইঞ্জিনিয়ার। অপশন ছিল না খুব বেশি। তবে নাটকটা শুরু ক্লাস ওয়ান থেকে। এই বিষয়গুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতাম। স্কুলে একটা অনুষ্ঠানে মিমিক্রি করেছিলাম কিছু অভিনেতাকে। সবার ভালো লাগে। দুর্ভাগ্যের বিষয় কোনোটাই শিখতে পারিনি। তারপর মনে জাগে হিরো হবো এবং বাড়িতে জানাই। নাগপুর থেকে কলকাতায় এসে একটা সিরিয়ালের বিজ্ঞাপন দেখলাম। যাওয়ার পরে ২০-২৫ পাতার স্ক্রিপ্ট দেয়। তারপর ভেতরে নিয়ে সিচুয়েশন দিলো সেই অনুযায়ী অভিনয় করতে হবে। প্রশ্ন করলো থিয়েটার করেন কিনা। পোর্টফোলিও জিজ্ঞেস করলো না থাকায় পোলারোয়েড ছবি দিতেই রিজেক্ট করে দেয়। পয়সা ছিল না বড় ছবি বানানোর। পরে ছবি নিয়ে গেলে জানায় একটা বন্ধুর চরিত্রই বাকি করবে? আমি বললাম হ্যাঁ স্যার যা দেবেন করব। যীশু সেনগুপ্তকে দেখি। মহাপ্রভু দেখতাম। তারপর সামনে থেকে দেখছি। সে এক অন্য অনুভুতি। প্রথম দৃশ্যের শুটিং। মাথা কাজ করছে না। সুদীপ মুখোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত এসে অনেক আশ্বস্ত করে। ৮টা এপিসোড শুট হয় কিন্তু সেটা রিলিজ হয়নি। নাম ছিল “সাত পাকে বাঁধা”।

প্রশ্ন: মুম্বই গিয়েছিলে কাজের জন্য এবং সিরিয়ালের পাশাপাশি সিনেমাতেও কাজ করেছ। অভিজ্ঞতা কেমন?

সুরজিৎ: ২০১৬-২০১৮ ছিলাম মুম্বইয়ে। সব থেকে বড় যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা হল বাংলায় আজ ২৪ বছর ধরে আমি কাজ করছি সম্মান পাইনি আর ৩ বছরে পেয়েছি সেই সম্মান। আমি তিস মার খান নই যা চরিত্র পাই চেষ্টা করি ফুটিয়ে তোলার। ভালবাসা পেয়েছি। ওদের নজরে একবার পড়ে গেলে আর নিজেকে প্রুভ করতে হয় না। ওরা ওখানে অভিনেতাকে পুজো করে যেটা বাংলায় এত বছর পরেও পাইনি। এতো বছর পরেও আমাকে এখানে বলতে হয় দাদা একটু দেখবেন, একটা কাজ দেখবেন! আর সবথেকে বড় তফাৎ হলো ইগো। এখানে কোন একজন নতুন মুখ যদি একবার পরিচিতি পেয়ে যায় তাহলে সে নিজেকে করণ জোহর, মণীশ মালহোত্রা, শাহরুখ মনে করতে শুরু করেন। বাধ্য হয়ে যাত্রায় নামলাম কারণ এখন আমার স্ট্রাগলটা আরো বাজে পর্যায়ে চলে গেছে।

Surajit Sen Official (@SurajitOfficial) / Twitter
প্রশ্ন: এত সিনেমা এত সিরিয়াল তবু দীর্ঘদিন টেলিভিশন থেকে দূরে। কেনো?

সুরজিৎ: ৬টা সিরিয়াল NOC দিয়ে বেরিয়ে এসেছি। প্রত্যেকের স্ট্রাগলের একটা ধরন থাকে যে যেভাবে লড়াই করে বাঁচতে পারো বাঁচো। আমি যেটা কোনদিন করিনি, সেটা হচ্ছে আমি তেলবাজিটা করতে পারিনি। প্রথম দিকে গিয়ে কাজের জন্য বলতে হতো কিন্তু পরের দিকে আমাকে আর গিয়ে বলতে হতো না। ভেঙ্কটেশ নিজের থেকে কোনও নতুন সিনেমা করলেই আমাকে ডেকে নিতো। খুব কষ্ট পেয়ে ছেড়ে মুম্বই চলে গেছিলাম। আসার পরে যেটা দেখলাম পলিটিক্স একটা বিরাট বড় জায়গা নিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। আমি মুখে না বললেও এটা পরিষ্কার যে যারা নায়ক-নায়িকা নয় এই মুহূর্তে তারাই কিন্তু রাজত্ব করছে ইন্ডাস্ট্রিতে, তারাই ইন্ডাস্ট্রির মহানায়ক-মহানায়িকা। তাদের এত টাকা আছে যে নিজেরাই সিনেমা তৈরি করছে। আমি জানি যে কী হয়, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে একটা ছবি হিট করানো হয়। পুরোটাই একটা পলিটিক্যাল গেম। যারা একটা সময় আমার বন্ধু ছিল তারা আজ মাটি থেকে আকাশে উঠে গেছে আর চেনে না আমাকে। কিন্তু এই জিনিসটা আমি কোনদিন করতে পারিনি। দুই একটা দল থেকে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু আমি পারিনি।

khelaghor
প্রশ্ন: আজকাল দেখা যায় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা একটা সময়ের পর রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন। তোমার কি মনে হয় যে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যারা মানুষের সেবা করবে বলে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন তারা রাজনীতিতে একমাত্র যোগ দিলেই আরো বেশি করে মানুষের সেবা করা যায়?

সুরজিৎ: আমার কথা সেটাই যদি সেটাই ব্যাপার হতো তাহলে এরা আগে কেন রাজনীতিতে যোগ দেয়নি? এরা তো আজকে আসেনি। সেরকম যদি মানুষের ভালো করতে হতো আগে কেনো আসেনি?
আমি এটাও জিজ্ঞাসা করছি যে রাজনীতিতে আসার পরেও তারা কী ভালো করেছে আমাকে একটু বলো। তবে ভোটটা তারাই পাবে। সংসদে কদিন যাচ্ছে তারা? মাস গেলে মোটা মাইনে পাচ্ছে, সব সুবিধা পাচ্ছে কিন্তু বিনিময়ে কী করছে দেশের জন্য? আমার আপত্তি তাতে নেই যে তারা নিজের যোগ্যতায় ঢুকেছে। কিছু কাজ করছে না তাতেও আপত্তি নেই। আমার পয়েন্ট হল যোগ্যতা যাদের ১% রয়েছে তারা পুরোপুরি অবহেলিত রয়ে যাচ্ছে এদের জন্যে। তার জন্যে দায়ী বিশেষ একজন। এত বছর ধরে রয়েছি টাকার সমস্যা এর আগে হতো না। তবে উদাহরণস্বরূপ বলছি যে ছবিতে আমি ৪৫ হাজার টাকা পেয়েছি সেই ছবিতে নায়ক ৭৫ লক্ষ টাকা পেয়েছে। এটা কি কখনও হয়?

সাক্ষাৎকার: তিতলি ভট্টাচার্য

Back to top button