শুধু বাবার সিনেমার নায়িকা হয়েই থেকে গেলেন! কেন অভিনয় ছেড়ে দিলেন চুমকি চৌধুরী?

একটা সময় তার অভিনয় দেখার জন্য হলের সামনে লাইন পড়তো। টিকিট বিক্রি হতো ব্ল্যাকে। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী (Chumki Choudhury ) আদতে সেই সময়ের জনপ্রিয় পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর (Anjan Choudhury ) মেয়ে। অঞ্জন চৌধুরীর দুই মেয়ে চুমকি ও রিনা চৌধুরী একটা সময় টলিউড দাপিয়েছেন। বলা চলে প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে তারা পড়তেন। বেশিরভাগ সিনেমাতেই দুই বোনের এক সঙ্গে দেখা মিলত। বাংলা স্বর্ণ যুগের দুই সফল অভিনেত্রী চুমকি এবং রিনা।

বলাই বাহুল্য বাংলা সিনেমায় পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর অবদানকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারোর নেই। একটা সময় ভেঙে পড়া বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে কার্যত একার হাতে ঘুরে দাঁড় করাতে সাহায্য করেছেন। তার অবদান ছাড়া বাংলা সিনেমার সেই জৌলুস ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না। অজস্র সব সফল সিনেমা তার ঝুলিতে। বাংলা সিনেমার বহু তারকার জন্ম হয়েছে অঞ্জন চৌধুরীর হাত ধরে।

অঞ্জন চৌধুরীর সিনেমা মানেই বাস্তবতার কাছাকাছি পারিবারিক গল্প। আর সেই সমস্ত সিনেমায় বুঁদ ছিল বাঙালি দর্শক। আর অঞ্জন চৌধুরীর সিনেমা মানেই দুটি মুখ নির্দিষ্ট থাকত। তার বড় এবং ছোট মেয়ে। বিশেষ করে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করতেন তার বড় কন্যা চুমকি চৌধুরী। ‘হীরক জয়ন্তী’, ‘মেজবউ,’ ‘গীত সংগীত,’ ‘লোফার’-এর মতো একাধিক সিনেমা এখনও বাঙালির মনে আছে।

শুধুমাত্র ছিল নিখাদ পারিবারিক গল্পে বুঁদ হতো বাঙালি। একটা সময় টলিউড দাপিয়েছেন চুমকি চৌধুরী। টলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে ছিলেন তিনি। কিন্তু স্বর্ণযুগের এই অভিনেত্রী হঠাৎ করেই যেন কোথাও হারিয়ে যান। বহু বছর পর একটা দুটো বাংলা সিরিয়ালে চুমকি চৌধুরীর দেখা মিলেছে। কিন্তু এত বিশাল স্টারডম সত্ত্বেও কেন হারিয়ে গেলেন তিনি?

ভীষণ রকম মাটির কাছাকাছি থাকা অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী জানিয়েছিলেন, তিনি অভিনয় করতে চাননি। আসতে চাননি এই পেশায়। ইচ্ছে ছিল শিক্ষিকা হওয়ার। একমাত্র বাবার জোরাজুরিতেই অভিনয়ে আসেন। অভিনেত্রীর কথায়, ঘরের কাজ, রান্নাবান্না, সেলাই, ঘর সাজানোতেই আলাদা আনন্দ উপভোগ করতেন তিনি।

তবে বাবা চেয়েছিলেন দুই মেয়েকেই অভিনয়ে আনতে। তবে একইসঙ্গে বাবার নির্দেশ ছিল তার প্রযোজনা, পরিচালনা ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করতে পারবেন না চুমকি। আর সেটাই মেনে নিয়েছিলে তিনি। ভালো জায়গা থেকে কাজের সুযোগ এলেও বাবার কথার অন্যথা করেননি তিনি। আসলে বাবাই ছিলেন চুমকি চৌধুরীর জীবনের সব। একাধারে তিনিই পিতা আবার তিনিই শিক্ষক।

আর তাই বাবাকে হারানোর পর ধীরে ধীরে অভিনয়ের থেকে দূরত্ব বেড়ে যায় চুমকি চৌধুরীর। অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন বাবাকে হারানোর পর আর শুটিং সেটে এসে মন দিতে পারতেন না কাজে। আর এরপর তিনি আর অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে অভিনেত্রী হারিয়েছেন মা ও ভাইকেও। আর সেইসব ধাক্কা সামলাতে পারেননি। আর তাই নিজেকে একেবারেই গুটিয়ে নিয়েছেন অভিনয় থেকে।

You cannot copy content of this page